Friday, December 7, 2018

দার্শনিক হিসেবে আল ফারাবী

আল ফারাবী একজন খ্যাতনামা দার্শনিক। তাঁর পুরো নাম আবু নসর মুহাম্মদ বিন তুরখান বিল আওযালগ আল ফারাবী। আব্বাসীয় শাসনামলে ৮৭০ সালে তুর্কিস্থানের ফারাব শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৯৫০ সালে দামেস্কে তিনি ইন্তেকাল করেন। এছাড়াও তিনি একজন মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, যুক্তিবিদ এবং সুরকার ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই 'শূন্যতা'-র অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। 
আল ফারাবী গভীরভাবে অ্যারিস্টটলের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি তার সুদীর্ঘ জীবনকালের এক বিরাট অংশ অ্যারিস্টটলের অধ্যয়নে এবং তাঁর মতবাদসমূহের টীকা রচনা ও সমালোচনায় ব্যয় করেছেন। কথিত আছে, তিনি প্রয় সত্তরটি নোটবুকে দর্শনশাস্ত্রের সারাংশ লিপিবদ্ধ করেন। অ্যারিস্টটলের দর্শনে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। এ কারণে তাকে ‘মুয়াল্লাম সানী’ বা দ্বিতীয় অ্যারিস্টটল বলা হতো। ফারাবীর মতে, দর্শন সকল বিজ্ঞানের আদি বিজ্ঞান। দার্শনিক জ্ঞান লাভ করা মানব জীবনের পরম লক্ষ্য। দর্শন অনুশীলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যুক্তিবিদ্যা - অধিবিদ্যা জ্ঞান এবং ভালো চরিত্র গঠনকে উল্লেখ করেন। আল ফারাবী ছিলেন সর্ব খোদাবাদের(Pantheism) সমর্থক। রাষ্ট্র নিয়ে আল ফারাবী দার্শনিক মত প্রকাশ করেন এবং আদর্শ রাষ্ট্র সংজ্ঞায়ীত করেন। আল ফারাবীকে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক বলা হয়।

ইসলামপূর্ব আরবে সাহিত্য চর্চার বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীর আরো অনেক ভাষার ন্যায় আরবীতেও সাহিত্য হিসেবে প্রথমে পদ্যের উন্মেষ ঘটে। সেকালে পদ্য লিখে রাখার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা ছিলনা। এক্ষেত্রে তারা স্মৃতিশক্তির উপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতি আরবদের কল্পনাতীত স্মৃতিশক্তি দান করে। আরবদের বিশ্বাস ছিল তাদের কবিরা বিশেষ বুদ্ধি ও জ্ঞানের অধিকারী। কবিদের সাহায্য করত জ্বীন বা শয়তান।
আরবদের রুক্ষ জীবনে পদ্যগুলো ছিল নির্ঝর যা তাদের চাঙ্গা করে তোলে। উটে ভ্রমণরত ক্লান্ত যাত্রীরা নিজেদের চাঙ্গা করার জন্য সুরের ঝংকার তোলার চেষ্টা করতো। তা থেকেই হয়ত সৃষ্টি হয় হুদা বা উষ্ট্র চালকের গান। আবার কথিত আছে, মুদর বিন নাযার নামে এক ব্যক্তি উট থেকে পড়ে আঘাত পেয়ে বিলাপ করতে থাকে। তার মধুর স্বরের বিলাপে উটগুলো আরো দ্রুত চলতে শুরু করে। তা থেকে রজয্্ নামক ছন্দের গান রচিত হয়। নিজেদের বক্তব্যকে সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য করে তুলতে জ্যোতির্বিদ, পুরোহিত  বা যাদুকররা এক বিশেষ ছন্দে কথা বলতো। তা থেকে সৃষ্টি হয় সজ বা ছন্দোবদ্ধ গদ্য। একে কবিতার প্রথম রুপ বলেও মনে করা হয়। আরবরা ছিল যুদ্ধপ্রবণ জাতি। যুদ্ধে সৈনিক ছাড়াও কবিদের আলাদা একটি স্থান ছিল। জ্বালাময়ী কবিতা রচনার মাধ্যমে কবিরা যোদ্ধাদের উৎসাহিত করতেন। নিজ গোত্রের বীরত্ব বর্ণনা করে কবিতা লিখে তারা যুদ্ধে কবিতা প্রতিযোগীতা করত। আবার মৃত যোদ্ধার শোর্য-বীর্য  বর্ণনা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় মরসিয়াহ বা শোকগাঁথা যা যোদ্ধাদেরকে মৃতের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণে প্ররোচিত করত। ভালবাসা, বিরহ প্রভৃতি অনুভূতিকেও তারা কবিতার মাধ্যমে তোলে ধরত যা পরিচিত ছিল নসীব্, তশবীর বা গযল নামে। তাদের কবিতায় ভালো-মন্দ, শ্লীল-অশ্লীল সব ধরনের বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়।
ইসলামপূর্ব আরব সমাজে কবিদের আধিপত্য কত গভীর ছিল, তা বুঝতে কষ্ট হয়না। কবিতা ছিল তাদের প্রাণপ্রিয় বস্তু।