Friday, December 7, 2018

ইসলামপূর্ব আরবে সাহিত্য চর্চার বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীর আরো অনেক ভাষার ন্যায় আরবীতেও সাহিত্য হিসেবে প্রথমে পদ্যের উন্মেষ ঘটে। সেকালে পদ্য লিখে রাখার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা ছিলনা। এক্ষেত্রে তারা স্মৃতিশক্তির উপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতি আরবদের কল্পনাতীত স্মৃতিশক্তি দান করে। আরবদের বিশ্বাস ছিল তাদের কবিরা বিশেষ বুদ্ধি ও জ্ঞানের অধিকারী। কবিদের সাহায্য করত জ্বীন বা শয়তান।
আরবদের রুক্ষ জীবনে পদ্যগুলো ছিল নির্ঝর যা তাদের চাঙ্গা করে তোলে। উটে ভ্রমণরত ক্লান্ত যাত্রীরা নিজেদের চাঙ্গা করার জন্য সুরের ঝংকার তোলার চেষ্টা করতো। তা থেকেই হয়ত সৃষ্টি হয় হুদা বা উষ্ট্র চালকের গান। আবার কথিত আছে, মুদর বিন নাযার নামে এক ব্যক্তি উট থেকে পড়ে আঘাত পেয়ে বিলাপ করতে থাকে। তার মধুর স্বরের বিলাপে উটগুলো আরো দ্রুত চলতে শুরু করে। তা থেকে রজয্্ নামক ছন্দের গান রচিত হয়। নিজেদের বক্তব্যকে সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য করে তুলতে জ্যোতির্বিদ, পুরোহিত  বা যাদুকররা এক বিশেষ ছন্দে কথা বলতো। তা থেকে সৃষ্টি হয় সজ বা ছন্দোবদ্ধ গদ্য। একে কবিতার প্রথম রুপ বলেও মনে করা হয়। আরবরা ছিল যুদ্ধপ্রবণ জাতি। যুদ্ধে সৈনিক ছাড়াও কবিদের আলাদা একটি স্থান ছিল। জ্বালাময়ী কবিতা রচনার মাধ্যমে কবিরা যোদ্ধাদের উৎসাহিত করতেন। নিজ গোত্রের বীরত্ব বর্ণনা করে কবিতা লিখে তারা যুদ্ধে কবিতা প্রতিযোগীতা করত। আবার মৃত যোদ্ধার শোর্য-বীর্য  বর্ণনা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় মরসিয়াহ বা শোকগাঁথা যা যোদ্ধাদেরকে মৃতের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণে প্ররোচিত করত। ভালবাসা, বিরহ প্রভৃতি অনুভূতিকেও তারা কবিতার মাধ্যমে তোলে ধরত যা পরিচিত ছিল নসীব্, তশবীর বা গযল নামে। তাদের কবিতায় ভালো-মন্দ, শ্লীল-অশ্লীল সব ধরনের বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়।
ইসলামপূর্ব আরব সমাজে কবিদের আধিপত্য কত গভীর ছিল, তা বুঝতে কষ্ট হয়না। কবিতা ছিল তাদের প্রাণপ্রিয় বস্তু।

No comments:

Post a Comment