Sunday, December 8, 2019

সৌদি রাজ পরিবার family tree of soudi monarch

সৌদি রাজ পরিবার।
প্রথম সৌদি স্টেট থেকে আধুনিক সৌদি স্টেট।
সৌদি রাজপরিবারের ফ্যামিলি ট্রি।

Friday, April 19, 2019

হেলেনেস্টিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

অর্থনৈতিক অগ্রগতিঃ আলেকজান্ডারের বিজয়ের পর উত্তরে দানিয়ুব থেকে দক্ষিণে ইথিওপিয়া, পূর্বে ভারত হয়ে চীন এবং পশ্চিমে  আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত গ্রিক বাণিজ্য বিস্তৃত হয়। সমগ্র প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক বিশাল অংশ গ্রিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলের সাথে সংযুক্ত হয়। সর্বোপরি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ব্যপকভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ও ব্যাংক ব্যবস্থাঃ হেলেনিস্টিক যুগের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছোঁয়া কৃষিক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত হয়। শাসকরা কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। দাস দাসীদের নিয়োগ করে কৃষির সমৃদ্ধিপূর্বক একে রাজস্বের শক্তিশালী উৎসে পরিণত করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক ব্যবস্থাও গড়ে উঠে।
সামাজিক অবস্থাঃ হেলেনিস্টিক যুগের সমৃদ্ধি সর্বস্তরের লোকেরা উপভোগ করতে পারেনি। মানুষের জীবনযাত্রার তেমন কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেনি। শাসক, বণিক ও অভিজাত শ্রেণীই ছিল প্রধান সুবিধাভোগী শ্রেণী।
বিজ্ঞান চর্চাঃ হেলেনিক যুগে আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।

দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে আল ফারাবী

তুর্কি বংশোদ্ভূত আল ফারাবী (৮৭০-৯৫০) মুসলিম বিশ্বের একজন মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আল ফারাবী দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, অধিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র ও রাষ্ট্রনীতিতে সৃজনশীল চিন্তা ও ধ্যান ধারণার অধিকার ছিলেন। এসব কারণে তাকে ‘২য় শিক্ষক’ এবং ‘২য় অ্যারিস্টটল’ বলা হয়।


ফারাবীর পরিচয়ঃ আবু নাসের আল ফারাবী ৮৭০ সালে তুরস্কের ফারাব জেলার অন্তর্গত ওয়াজিস বা ওয়াসিজ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন পারসিক বা তুর্কি বংশোদ্ভূত নাবিক ছিলেন। তুর্কিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে তিনি বাগদাদে আরবী ও গ্রীক ভাষা অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি আবুল বাশার ও সাত্তা-বিন-ইউসুফের নিকট যুক্তিবিদ্যা ও গ্রীকদর্শন অধ্যয়ন করেন। আল ফারাবিদর্শন ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা ও সংগীতের ন্যায় জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখেন। তিনি একজন খ্যাতনামা দার্শনিক ও বহুভাষাবিদ পন্ডিত। তিনি প্রায় সত্তরটি ভাষা জানতেন। আর যে কারণে আরবরা তাকে বলতো “হাকিম সিনা” অর্থাৎ দ্বিতীয় আচার্য বা দ্বিতীয় শিক্ষক।


দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে আল ফারাবীর অবদানঃ
রাষ্ট্রদর্শনঃ আল ফারাবী রাষ্ট্রদর্শনে মূলত অ্যারিস্টটল ও প্লেটোকে অনুকরণ করেছেন। তিনি প্লেটোর “Republic & Laws” গ্রন্থের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রবিষয়ক গবেষণা করেন। প্লেটোর মতো তিনিও ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক তুলে ধরেন।
অধিবিদ্যাঃ ফারাবী বলেন আল্লাহ হতে সবকিছুর জন্ম। তার জগতের প্রত্যেকটি ঘটনা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অনুসারে ঘটতে থাকে।
যুক্তিবিদ্যাঃ ফারাবির মতে যুক্তিবিদ্যা কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিশ্লেষণ নয়। বরং এটা ব্যকরণ ও জ্ঞানের উপরে  অনেক সমালোচনা ও আলোচনা করে। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনার অবদান

বহুমুখী প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ইবনে সীনা জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন। তার প্রকৃত নাম আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা। বুখারা এর আফসানা নামক স্থানে ৯৮০ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১০ বছরে তিনি পবিত্র কোরআন শিক্ষা করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ইবনে সীনার নিকট প্রসিদ্ধ চিকিৎসাবিদগণ চিকিৎসাশাস্ত্র ও তার অভিনব চিকিৎসা প্রণালী শিক্ষা করতে আসেন।
চিকিৎসা শাস্ত্রে তার অবদানঃ প্রচলিত আদিম পদ্ধতির স্থলে অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালু করে ইবনে সিনা যশস্বী হয়েছিলেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে তার অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র ও চিকিৎসা প্রণালী এবং শল্য চিকিৎসার দিশারী মনে করা হয়।
ইবনে সিনা যে কেবল একজন ভাল চিকিৎসকই ছিলেননা বরং ঔষধ বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তার অবদান তুলনাহীন। তিনি ঔষধ তৈরি, সংরক্ষণ ও তা প্রয়োগের সর্বাধুনিক যুক্তিগ্রাহ্য পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলেন। যেজন্য ইউরোপের চিকিৎসাবিদদের নিকট ও পরিচিত হন “master of medicine” নামে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের উপর ইবনে সিনা ১৫ খানা পুস্তক রচনা করেছেন তার “কানুন ফিত তিবব” হলো সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। তাঁর এই গ্রন্থে ৭৬০টি ঔষুধের বর্ণনা রয়েছে। চিকিৎসা বিদ্যায় তার অবদানের কারণে ইবনে সিনাকে বলে প্রাচ্যের গ্যালন বলা হয়।

Friday, December 7, 2018

দার্শনিক হিসেবে আল ফারাবী

আল ফারাবী একজন খ্যাতনামা দার্শনিক। তাঁর পুরো নাম আবু নসর মুহাম্মদ বিন তুরখান বিল আওযালগ আল ফারাবী। আব্বাসীয় শাসনামলে ৮৭০ সালে তুর্কিস্থানের ফারাব শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৯৫০ সালে দামেস্কে তিনি ইন্তেকাল করেন। এছাড়াও তিনি একজন মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, যুক্তিবিদ এবং সুরকার ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই 'শূন্যতা'-র অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। 
আল ফারাবী গভীরভাবে অ্যারিস্টটলের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি তার সুদীর্ঘ জীবনকালের এক বিরাট অংশ অ্যারিস্টটলের অধ্যয়নে এবং তাঁর মতবাদসমূহের টীকা রচনা ও সমালোচনায় ব্যয় করেছেন। কথিত আছে, তিনি প্রয় সত্তরটি নোটবুকে দর্শনশাস্ত্রের সারাংশ লিপিবদ্ধ করেন। অ্যারিস্টটলের দর্শনে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। এ কারণে তাকে ‘মুয়াল্লাম সানী’ বা দ্বিতীয় অ্যারিস্টটল বলা হতো। ফারাবীর মতে, দর্শন সকল বিজ্ঞানের আদি বিজ্ঞান। দার্শনিক জ্ঞান লাভ করা মানব জীবনের পরম লক্ষ্য। দর্শন অনুশীলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যুক্তিবিদ্যা - অধিবিদ্যা জ্ঞান এবং ভালো চরিত্র গঠনকে উল্লেখ করেন। আল ফারাবী ছিলেন সর্ব খোদাবাদের(Pantheism) সমর্থক। রাষ্ট্র নিয়ে আল ফারাবী দার্শনিক মত প্রকাশ করেন এবং আদর্শ রাষ্ট্র সংজ্ঞায়ীত করেন। আল ফারাবীকে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক বলা হয়।

ইসলামপূর্ব আরবে সাহিত্য চর্চার বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীর আরো অনেক ভাষার ন্যায় আরবীতেও সাহিত্য হিসেবে প্রথমে পদ্যের উন্মেষ ঘটে। সেকালে পদ্য লিখে রাখার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা ছিলনা। এক্ষেত্রে তারা স্মৃতিশক্তির উপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতি আরবদের কল্পনাতীত স্মৃতিশক্তি দান করে। আরবদের বিশ্বাস ছিল তাদের কবিরা বিশেষ বুদ্ধি ও জ্ঞানের অধিকারী। কবিদের সাহায্য করত জ্বীন বা শয়তান।
আরবদের রুক্ষ জীবনে পদ্যগুলো ছিল নির্ঝর যা তাদের চাঙ্গা করে তোলে। উটে ভ্রমণরত ক্লান্ত যাত্রীরা নিজেদের চাঙ্গা করার জন্য সুরের ঝংকার তোলার চেষ্টা করতো। তা থেকেই হয়ত সৃষ্টি হয় হুদা বা উষ্ট্র চালকের গান। আবার কথিত আছে, মুদর বিন নাযার নামে এক ব্যক্তি উট থেকে পড়ে আঘাত পেয়ে বিলাপ করতে থাকে। তার মধুর স্বরের বিলাপে উটগুলো আরো দ্রুত চলতে শুরু করে। তা থেকে রজয্্ নামক ছন্দের গান রচিত হয়। নিজেদের বক্তব্যকে সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য করে তুলতে জ্যোতির্বিদ, পুরোহিত  বা যাদুকররা এক বিশেষ ছন্দে কথা বলতো। তা থেকে সৃষ্টি হয় সজ বা ছন্দোবদ্ধ গদ্য। একে কবিতার প্রথম রুপ বলেও মনে করা হয়। আরবরা ছিল যুদ্ধপ্রবণ জাতি। যুদ্ধে সৈনিক ছাড়াও কবিদের আলাদা একটি স্থান ছিল। জ্বালাময়ী কবিতা রচনার মাধ্যমে কবিরা যোদ্ধাদের উৎসাহিত করতেন। নিজ গোত্রের বীরত্ব বর্ণনা করে কবিতা লিখে তারা যুদ্ধে কবিতা প্রতিযোগীতা করত। আবার মৃত যোদ্ধার শোর্য-বীর্য  বর্ণনা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় মরসিয়াহ বা শোকগাঁথা যা যোদ্ধাদেরকে মৃতের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণে প্ররোচিত করত। ভালবাসা, বিরহ প্রভৃতি অনুভূতিকেও তারা কবিতার মাধ্যমে তোলে ধরত যা পরিচিত ছিল নসীব্, তশবীর বা গযল নামে। তাদের কবিতায় ভালো-মন্দ, শ্লীল-অশ্লীল সব ধরনের বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়।
ইসলামপূর্ব আরব সমাজে কবিদের আধিপত্য কত গভীর ছিল, তা বুঝতে কষ্ট হয়না। কবিতা ছিল তাদের প্রাণপ্রিয় বস্তু।